Skip to main content

বধূ বরণ - কাজী নজরুল ইসলাম | স্বামী স্ত্রীর কবিতা

bodhu-boron-kazi-nazrul-islam-shami-stri-kobita

এতদিন ছিলে ভুবনের তুমি 
আজ ধরা দিলে ভবনে, 
নেমে এলে আজ ধরার ধুলাতে 
ছিলে এতদিন স্বপনে! 
শুধু শোভাময়ী ছিলে এত দিন 
কবির মানসে কলিকা নলিন, 
আজ পরশিলে চিত্ত- পুলিন 
বিদায় গোধূলি- লগনে। 
ঊষার ললাট- সিন্দুর- টিপ 
সিথিঁতে উড়াল পবনে।। 

প্রভাতে ঊষা কুমারী, সেজেছে 
সন্ধ্যায় বধূ ঊষসী, 
চন্দন- টোপা- তারা- কলঙ্কে 
ভ'রেছে বে-দাগ- মু'শশী। 
মুখর মুখ আর বাচাল নয়ন 
লাজ সুখে আজ যাচে গুন্ঠন, 
নোটন- কপোতি কন্ঠে এখন 
কূজন উঠিছে উছসি'। 
এতদিন ছিলে শুধু রূপ- কথা, 
আজ হলে বধূ রূপসী।। 

দোলা চঞ্চল ছিল এই গেহ 
তব লটপট বেণী ঘা'য়, 
তারি সঞ্চিত আনন্দে ঝলে 
ঐ ঊর- হার মনিকায়। 
এ ঘরের হাসি নিয়ে যাও চোখে, 
সে গৃহ- দ্বীপ জ্বেলো এ আলোকে, 
চোখের সলিল থাকুক এ-লোকে- 
আজি এ মিলন মোহানায় 
ও- ঘরের হাসি বাশিঁর বেহাগ 
কাঁদুক এ ঘরে সাহানায়।। 

বিবাহের রঙ্গে রাঙ্গা আজ সব, 
রাঙ্গা মন, রাঙ্গা আভরণ, 
বলো নারী- 'এই রক্ত- আলোকে 
আজ মম নব জাগরণ!' 
পাপে নয় পতি পুণ্যে সুমতি 
থাকে যেন, হ'ইয়ো পতির সারথি। 
পতি যদি হয় অন্ধ, হে সতী, 
বেঁধো না নয়নে আবরণ; 
অন্ধ পতিরে আঁখি দেয় যেন 
তোমার সত্য আচরণ।।

 ভালো লাগলে শেয়ার ও কমেন্ট করবেন 

Comments

You May Read Also

অপেক্ষা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রোমান্টিক প্রেমের কবিতা

সকল বেলা কাটিয়া গেল বিকাল নাহি যায়। দিনের শেষে শ্রান্তছবি কিছুতে যেতে চায় না রবি, চাহিয়া থাকে ধরণী-পানে, বিদায় নাহি চায়। মেঘেতে দিন জড়ায়ে থাকে, মিলায়ে থাকে মাঠে— পড়িয়া থাকে তরুর শিরে, কাঁপিতে থাকে নদীর নীরে, দাঁড়ায়ে থেকে দীর্ঘ ছায়া মেলিয়া ঘাটে বাটে। এখনো ঘুঘু ডাকিছে ডালে করুণ একতানে। অলস দুখে দীর্ঘ দিন ছিল সে বসে মিলনহীন, এখনো তার বিরহগাথা বিরাম নাহি মানে। বধূরা দেখো আইল ঘাটে, এল না ছায়া তবু। কলস-ঘায়ে ঊর্মি টুটে, রশ্মিরাশি চূর্ণি উঠে, শ্রান্ত বায়ু প্রান্তনীর চুম্বি যায় কভু। দিবসশেষে বাহিরে এসে সেও কি এতখনে নীলাম্বরে অঙ্গ ঘিরে নেমেছে সেই নিভৃত নীরে, প্রাচীরে-ঘেরা ছায়াতে-ঢাকা বিজন ফুলবনে? স্নিগ্ধ জল মুগ্ধভাবে ধরেছে তনুখানি। মধুর দুটি বাহুর ঘায় অগাধ জল টুটিয়া যায়, গ্রীবার কাছে নাচিয়া উঠি করিছে কানাকানি। কপোলে তার কিরণ প’ড়ে তুলেছে রাঙা করি। মুখের ছায়া পড়িয়া জলে নিজেরে যেন খুঁজিছে ছলে, জলের’পরে ছড়ায়ে পড়ে আঁচল খসি পড়ি। জলের’পরে এলায়ে দিয়ে আপন রূপখানি শরমহীন আরামসুখে হাসিটি ভাসে মধুর মুখে, বনের ছায়া ধরার চোখে দিয়েছে পাতা টানি। সলিলতলে সোপান-’পরে উদাস বেশবাস

যেদিন আমি হারিয়ে যাব - কাজী নজরুল ইসলাম

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে বুঝবে সেদিন বুঝবে। ছবি আমার বুকে বেধে পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে ফিরবে মরু কানন গিরি সাগর আকাশ বাতাশ চিরি সেদিন আমায় খুজবে বুঝবে সেদিন বুঝবে। স্বপন ভেঙ্গে নিশুত রাতে, জাগবে হঠাৎ চমকে কাহার যেন চেনা ছোয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে- জাগবে হঠাৎ ছমকে, ভাববে বুঝি আমিই এসে বসনু বুকের কোলটি ঘেষে ধরতে গিয়ে দেখবে যখন শুন্য শয্যা মিথ্যা স্বপন বেদনাতে চোখ বুজবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে। গাইতে গিয়ে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না বলবে সবাই- সেই যে পথিক তার শোনানো গান না?- আসবে ভেঙ্গে কান্না, পড়বে মন আমার সোহাগ কন্ঠে তোমার কাদবে বেহাগ পড়বে মনে আমার ফাকি অশ্রুহারা কঠিন আখি ঘন ঘন মুছবে, বুঝবে সেদিন বুঝবে। আবার যেদিন শিউলী ফুলে ভরবে তোমার অঙ্গন তুলতে সে ফুল গাথতে মালা, কাপবে তোমারকঙ্কণ কাদবে কুটির অঙ্গন, শিউলী ঢাকা মোর সমাধি পড়বে মনে উঠবে কাদি বুকের জ্বালা করবে মালা চোখের জলে সেদিন বালা মুখের হাসি ঘুচবে বুঝবে সেদিন বুঝবে। আসবে আবার আশিন হাওয়া, শিশির ছেচা রাত্রি থাকবে সবাই- থাকবে না এই মরন পথের যাত্রীই আসবে শিশির রাত্রি, থাকবে পাশে বন্ধু স

দুজন - জীবনানন্দ দাশ | প্রেম নিয়ে কষ্টের কবিতা

আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন-কতদিন আমিও তোমাকে খুঁজি নাকো;- এক নক্ষত্রের নিচে তবু-একই আলোপৃথিবীর পারে আমরা দুজনে আছি; পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়, প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়, হয় নাকি?’- বলে সে তাকাল তার সঙ্গিনীর দিকে; আজ এই মাঠ সূর্য সহধর্মী অঘ্রাণ কার্তিকে প্রাণ তার ভরে গেছে। দুজনে আজকে তারা চিরস্থায়ী পৃথিবীর ও আকাশের পাশে আবার প্রথম এল-মনে হয়- যেন কিছু চেয়ে-কিছু একান্ত বিশ্বাসে। লালচে হলদে পাতা অনুষঙ্গে জাম বট অশ্বত্থের শাখার ভিতরে অন্ধকারে নড়ে- চড়ে ঘাসের উপর ঝরে পড়ে; তারপর সান্ত্বনায় থাকে চিরকাল; যেখানে আকাশে খুব নীরবতা,শান্তি খুব আছে, হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হলে ক্রমে ক্রমে যেখানে মানুষ আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছে: সেই ব্যাপ্ত প্রান্তরে দুজন; চারিদিকে ঝাউ আম নিম নাগেশ্বরে হেমন্ত আসিয়া গেছে;-চিলের সোনালি ডানা হয়েছে খয়েরি; ঘুঘুর পালক যেন ঝরে গেছে- শালিকের নেই আর দেরি, হলুদ কঠিন ঠ্যাং উঁচু করে ঘুমাবে সে শিশিরের জলে; ঝরিছে মরিছে সব এই খানে বিদায় নিতেছে ব্যাপ্ত নিয়মের ফলে। নারী তার সঙ্গীকে : ‘পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়, জানি আমি