আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের
মত থাকবে না তোমার,
যেমন হিরোশিমার পর আর কিছুই আগের মতো নেই
উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত।
যে কলিংবেল বাজে নি
তাকেই মুর্হুমুহু শুনবে বজ্রের মত বেজে উঠতে এবং থরথর
ক’রে উঠবে দরোজা জানালা আর তোমার হৃৎপিন্ড।
পরমুহূর্তেই তোমার ঝনঝন-
ক’রে ওঠা এলোমেলো রক্ত
ঠান্ডা হ’য়ে যাবে যেমন
একাত্তরে দরোজায় বুটের অদ্ভুদ শব্দে নিথর
স্তব্ধ হ’য়ে যেত ঢাকা শহরের জনগণ।
আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের
মত থাকবে না তোমার।
রাস্তায় নেমেই দেখবে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রতিটি রিকশায়
ছুটে আসছি আমি আর
তোমাকে পেরিয়ে চ’লে যাচ্ছি।
এদিকে-সেদিকে তখন তোমার রক্ত আর
কালো চশমায় এত অন্ধকার
যেনো তুমি ওই চোখে কোন কিছুই দ্যাখো নি।
আমাকে ভালবাসার পর
তুমি ভুলে যাবে বাস্তব আর অবাস্তব,
বস্তু আর স্বপ্নের পার্থক্য।
সিঁড়ি ভেবে পা রাখবে স্বপ্নের চূড়োতে,
ঘাস ভেবে দু-পা ছড়িয়ে বসবে অবাস্তবে,
লাল টুকটুকে ফুল ভেবে খোঁপায় গুঁজবে গুচ্ছ গুচ্ছ স্বপ্ন।
না-খোলা শাওয়ারের নিচে বারোই
ডিসেম্বর থেকে তুমি অনন্তকাল দাঁড়িয়ে থাকবে
এই ভেবে যে তোমার চুলে ত্বকে ওষ্ঠে গ্রীবায়
অজস্র ধারায় ঝরছে বোদলেয়ারের আশ্চর্য মেঘদল।
তোমার যে ঠোঁটে চুমো খেয়েছিলো
উদ্যমপরায়ণ এক প্রাক্তন প্রেমিক,
আমাকে ভালবাসার পর সেই নষ্ট ঠোঁট খঁসে প’ড়ে
সেখানে ফুটবে এক অনিন্দ্য গোলাপ।
আমাকে ভালবাসার পর আর কিছুই আগের
মত থাকবে না তোমার।
নিজেকে দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্ত
মনে হবে যেনো তুমি শতাব্দীর পর
শতাব্দীশুয়ে আছো হাসপাতালে। পরমুহূর্তেই মনে হবে
মানুষের ইতিহাসে একমাত্র তুমিই সুস্থ,
অন্যরা ভীষণ অসুস্থ।
শহর আর সভ্যতার ময়লা স্রোত
ভেঙে তুমি যখন চৌরাস্তায় এসে
ধরবে আমার হাত,
তখন তোমার মনে হবে এ-শহর আর বিংশ শতাব্দীর
জীবন ও সভ্যতার নোংরা পানিতে একটি নীলিমা-
ছোঁয়া মৃণালের শীর্ষে
তুমি ফুটে আছো এক নিষ্পাপ বিশুদ্ধ পদ্ম।
কবিতাটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন
Comments
Post a Comment
অনুগ্রহ করে কমেন্ট বক্সে খারাপ ভাষা বা স্প্যাম লিঙ্ক দিবেন না, ধন্যবাদ